পটুয়াখালীর গলাচিপায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা সুবিধাভোগীদের স্বাক্ষর জাল করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে ঘটনার তদন্তে ছয়জনের নাম পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম। এদিকে সুবিধাভোগীদের টাকা আত্মসাতের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমান।
সরেজমিন ও গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রতনদীতালতলী ইউনিয়নের রতনদী গ্রামের মুকুল কৃষ্ণ সেন তাঁর মা শোভা রাণীর বয়স্ক ভাতার টাকা না পেয়ে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। অফিস থেকে জানানো হয়, তাঁর মায়ের স্বাক্ষর জাল করা কাগজে ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান সত্যায়িত করেছেন এবং মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত মোবাইল নম্বরেই শোভা রাণীর বয়স্ক ভাতা যায়। এ ঘটনা জানার পরই শোভা রাণীর ছেলে মুকুল কৃষ্ণ সেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে প্রাথমিকভাবে শোভা রাণীসহ ছয়জনের স্বাক্ষর জাল ও টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা। রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিজহাওলা গ্রামের ভাতাভোগী জয়নব বিবির ছেলে নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার মায়ের ভাতার টাকা অনেক দিন ধরে আসে না। পরে অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারি মোবাইল নম্বর কে বা কারা পরিবর্তন করে দিয়েছে।
গত রবিবার ইউপি সদস্য হাফিজুর ফোন দিয়ে জানতে চান মোবাইলে তিন হাজার টাকা বিকাশে এসেছে কি না। পরে বিকাশ নম্বর চেক করে দেখি স্থানীয় কাটাখালী বাজারের বিকাশ এজেন্ট নূর হোসেনের নম্বর থেকে তিন হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।’অভিযুক্ত রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রায় ৩৯ জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা একটা ভুল ছিল। যেহেতু সবাই আমার ওয়ার্ডের ভোটার, তাই আপাতত আমি টাকা ফেরত দিচ্ছি।
আমার কাছে আমার আত্মীয়-স্বজনের ১২টি সিম রয়েছে। তাঁদের ভাতার টাকাও ফেরত দিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে রতনদীতালতলী ইউনিয়নের কাটাখালী বাজারের জনৈক নূর হোসেন ও উলানিয়া বাজারের আরেকটি বিকাশ নম্বর থেকে ১০ জনকে তিন হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে। আমার জানা মতে, ৩৯ জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।
রতনদীতালতলী ইউপি চেয়ারম্যান গোলম মোস্তফা খান বলেন, ‘এরই মধ্যে সব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। বয়স্ক ও বিধবা ভাতায় যদি কোনো অনিয়ম থেকে থাকে, তাহলে তার তালিকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অনিয়ম থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।